শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে, যা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধারে ছাত্র-জনতার অব্যাহত আন্দোলনের ফলস্বরূপ ঘটেছে। গত ৫ আগস্ট, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে চলে যান। আজকের দিনটি সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটির ১ মাস পূর্তি।
আন্দোলনের পটভূমি: রক্তাক্ত জুলাই-আগস্ট
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের সঙ্গে তুলনা করার পর থেকে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ শুরু হয়। জুলাইয়ের শুরুর দিক থেকেই শিক্ষার্থীরা অভিনব প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে। সেই সময় শেখ হাসিনা সরকারের আক্রমণাত্মক মনোভাব আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে। ছাত্রলীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলার ফলে গণবিস্ফোরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া ন্যক্কারজনক হামলা জনমনে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
শহীদি মার্চ এবং আন্দোলনের বিস্তার
আন্দোলনের গতি বাড়তে থাকে। শহীদ মিনার থেকে আন্দোলনের নেতারা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করেন। বিক্ষোভ দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় এবং সারা দেশব্যাপী সংহতি গড়ে ওঠে। পুলিশ ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীদের গুলিতে বহু প্রাণহানি ঘটে, যা শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে ঘৃণার সঞ্চার করে।
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার দেশত্যাগ
আন্দোলনের চাপে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ভারত চলে যান। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা দেন। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা পরিষদ শপথ গ্রহণ করে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ জন উপদেষ্টা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন।
সহিংসতার চিত্র: প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি
ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে প্রায় ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। পুলিশের গুলি এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার ফলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের পরিবার হত্যার বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করছে। শেখ হাসিনা সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপ এবং দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমপি এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন নতুন এক বাংলাদেশের আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে স্বৈরাচারের অবসান ঘটেছে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।