কোটা সংস্কারের দাবিতে বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা শুরু করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা
সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিতে রোববার ঢাকার বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা শুরু করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এই পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি শাহবাগ, মৎসভবন, প্রেসক্লাব হয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও এই পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
স্লোগান ও কর্মসূচি:
পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন, যেমন ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারাদেশে হামলা কেন, প্রশাসনের জবাব চাই’, ‘হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি।
আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানায়
নাহিদ ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: “কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রধান দাবি হলো ২০১৮ সালের ঘোষণা অনুযায়ী কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা চালু রাখা। আমরা চাই সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটার অবসান ঘটুক এবং সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রাখা হোক।”
মেহেদী হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: “সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রথা বৈষম্য তৈরি করে। আমরা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ চাই। আমাদের দাবিগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং আদালতের রায় অনুযায়ী কোটার পুনর্বহাল করা উচিত নয়। আমরা একটি মেধাভিত্তিক সমাজ চাই।”
আলিফা নাহার, সরকারি সাত কলেজ: “আমরা কেবল মেধার ভিত্তিতে চাকরি চাই। বিভিন্ন কোটা সুবিধা বাতিল করতে হবে এবং শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রাখা হোক। আমাদের আন্দোলন সেই দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব যতক্ষণ না আমাদের দাবি মানা হয়।”
জুনায়েদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: “আমাদের আন্দোলনের মূল কারণ হলো মেধাবীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। কোটা প্রথার মাধ্যমে অনেক যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই সংবিধান অনুযায়ী কোটা পদ্ধতির পুনর্গঠন এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ। আমরা চাই আমাদের দাবি মানা হোক।”
ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া:
এদিকে, ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীকে দোয়েল চত্বর ও কার্জন হল এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট:
গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ক্রমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে মানববন্ধন ও সমাবেশের মত কর্মসূচি থাকলেও গত সপ্তাহে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
আন্দোলনের দাবি:
আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করলেও বর্তমানে তারা একটি প্রধান দাবিতে স্থির রয়েছেন: সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম পর্যায়ে কোটা এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করা।
সুপ্রিম কোর্টের রায়:
এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দিলেও আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, কেবল অনগ্রসরদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা মানতে তারা রাজি আছেন, অন্য কোনো কোটা নয়।
সূত্র: SL/Dorshok24.com/bd18724