বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে। বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য যা করা জরুরি, সে বিষয়গুলো নিয়ে আজকে কথা বলবো। আমার কথা হলো বাংলাদেশকে এবার নতুন করে স্বাধীন ও মুক্ত করতে হলে শেখ মুজিবুর রহমানকে তোষণ করা, তার বন্দনা করা বন্ধ করতে হবে। তার মতো স্বৈরাচার ও খুনিকে কিউট হিসেবে দেখানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। সোজা কথায় সবার আগে শেখ মুজিবুর রহমান বন্দনা বন্ধ করা উচিৎ। তার সম্পর্কে ভালো করেই জানা এবং জানানো উচিৎ। স্বাধীনতার আগে এবং পরে তার রূপ কেমন ছিল, বাংলাদেশ কায়েম হবার পরেও সে কী করেছে, সেটা জেনজি প্রজন্ম জানে না। আমরা শেখ সম্পর্কে জানবো এবং বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য যা যা করা জরুরি, সে বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবো ধীরে ধীরে।
কেমন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান?
হাসিনার চেয়েও ভয়ংকর ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের জমিনে সর্বপ্রথম ভোট চুরির ঘটনা ঘটান তিনিই। বাংলাদেশ হবার পূর্বেই তার এই ভোট চুরির রেকর্ড আছে। বাংলাদেশ কায়েম হবার পর তো ভোট ডাকাতিই করা শুরু করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার, প্রথম গণহত্যাকারী শাসক শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশের হাজারো-লক্ষ মানুষকে দুর্ভিক্ষ দিয়ে মেরেছে এই শেখ মুজিবুর রহমানই। বিরোধী মত দমনে তিনি হাসিনার চেয়েও ভয়াবহ বর্বর এবং জালিম ছিলেন তিনি।
শেখ মুজিবুর রহমানই বাকশাল কায়েম করে সব ধরনের রাজনৈতিক অধিকার বাংলাদেশের জমিন থেকে কেড়ে নিয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এই জমিনে সর্বপ্রথম শেখ মুজিবুর রহমানই। চারটি পত্রিকা বাদে দেশের সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনিই।
ক্ষমতাকে একমাত্র তার নিজের হাতে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য তিনি তার দল আওয়ামী লীগকেও বন্ধ করে দেন। তিনি তখন বাকশাল কায়েম করেন এবং তার একক হাতে বাংলাদেশ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি বনে যান। তার দলসহ সব দলকেই তিনি বাকশালি হতে বাধ্য করেন।
সদ্য স্বাধীন দেশটাকে তিনি একমাত্র তার নিজের সম্পদ মনে করেন। আমাদের এলাকার একজন মুরুব্বি ছিলেন। যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ করেছেন। গত বছর মারা গেছেন। তিনি বলছেন শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মালিকানা একচ্ছত্রভাবে নেওয়ার পর তার অনুসারীরাও নাকি ঘোষণা করা শুরু করে:
এক নেতার একদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
মানে টোটাল বাংলাদেশটাকেই তিনি তার একক মালিকানায় নিয়ে গিয়েছে। এই একক মালিকানায় নেওয়ার জন্যই তিনি তাঁর দল আওয়ামী লীগকেও বন্ধ করে বা নিষিদ্ধ করে দেয়।
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাঁর বদান্যতায় আওয়ামী পাণ্ডাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে না দিলে হয়তো মুজিব ছানারা আজকেও বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারতো না। তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যেতো।
যেই জিয়ার উছিলায় তারা নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে, আওয়ামী অকৃতজ্ঞ বদমায়েশের দল সেই জিয়ার বিরুদ্ধেও ঘৃণা ছড়ায়।
যাই হোক, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার সময়টা খেয়াল করে দেখুন, মানুষ তার ওপর কী পরিমাণ বিরক্ত হলে স্বাধীনতার মাত্র তিন-চার বছরের মাথায় তাকে খুন করে ফেলে। চিন্তা করুন, মানুষকে কী ভয়াবহ কষ্ট দিলে মানুষ তার মৃত্যুর পরেও প্রতিবাদ জানায়নি। তার পক্ষে কেউ আন্দোলনও করেনি। তার জানাজায়ও অংশগ্রহণ করেনি।
এতো কিছুর ভিড়েও তার একটা ভালো কাজ আছে। সেটা হলে সে যাদের ইন্ধনে বা যাদের ফাঁন্দে পড়ে পাকিস্তান ভাঙ্গার অবিসংবাদিত নেতা হয়েছে ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসক হয়েছেন; তিনি সেই ধর্মবিদ্বেষী বামপন্থী হাইওয়ানদেরকেই বাংলাদেশের জমিনে ভালোভাবেই দমন করেছেন। যদিও এটা তিনি তার ক্ষমতাকে মসৃণ করতে করেছিলো, তবুও এটার জন্য তাকে ছোট্ট করে হলেও একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়।
মূলত তিনি ক্ষমতার জন্যই বামপন্থীদেরকে সর্বোচ্চ লেভেলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দমন করেছেন। কিন্তু দমন করতে গিয়ে সহস্র বামপন্থীকে তিনি খুন করেছেন। উঁহু, শুধু বামপন্থী না, অজস্র আলিম-ওলামাকেও খুন করেছেন। অথচ আজকে বামপন্থী-জাসদরাও সেই খুনি-ডিক্টেটরকে হিরো বানিয়ে বসে আছে। তাকে বঙ্গবন্ধু, জাতির আব্বু ডাকতে ডাকতে তারা তাদের জিহ্বাও ক্ষয় করে ফেলছে।
মূলত বামপন্থী নেতা সিরাজ শিকদারকে তিনি হত্যা করেছে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে। এটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্রসফায়ার, প্রথম বিচার বহির্ভূত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। মানে প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শুরুটা, ক্রসফায়ারের নিকৃষ্ট কাজটা তিনিই করেন।
ডিক্টেটর, খুনি, ভোট চোর শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তকসহ সব ধরনের বইপত্রে আজকে ফেরেশতা হিসেবে আবির্ভূত করানো হয়েছে। তাকে এমন ইনোসেন্ট হিসেবে উপস্থাপন করার ফলে মানুষ ভাবে— হায়রে, শেখ মুজিবুর রহমান কত্তো কত্তো ভালো ছিলো গো, কেবল মাইয়াডাই এট্টু দুষ্টু হয়েছে!
স্যরি ব্রো, আপনার এমন বোধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হয়। শেখ মুজিব ভালো কিন্তু তার মেয়ে খারাপ, এটা চূড়ান্ত ভুয়া একটা ন্যারেটিভ! আপনাদের শখের শেখ মুজিব কখনোই এতো ইনোসেন্ট ছিলেন না। তবে হ্যাঁ, তিনি কোয়ালিফাইড লিডার ছিলেন এবং তার অনুসারীদের কাছে পাকিস্তান ভাঙ্গার আগে থেকেই প্রচণ্ড জনপ্রিয় ছিলেন।
হাসিনা যদিও তার বাপকে সর্বাত্মক অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তথাপি এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুজিবুর রহমানের চেয়ে হাসিনা তুলনামূলক কম খারাপ। হাসিনা এখনো সার্বিকভাবে তার বাপকে অতিক্রম করতে পারেনি। সে মুজিবুর রহমানের মতো দুষ্টু হতে হলে তাকে আরো কয়েকবার জন্ম নিতে হবে! কারণ, মুজিব তিন চার বছরের শাসনামলে যা করেছে, হাসিনা সতেরো বছরেও তা করতে এখনো সক্ষম হয়নি।
আরো একটা বিষয়, আজকে ভিন্নমত দমনে দলীয় লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে আপনারা ছাত্রলীগকে দেখেন, কিন্তু একাত্তর পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অনুগত দাসদের দ্বারা রক্ষীবাহিনী নামক একটি খুনি বাহিনী গঠন করে নির্মমভাবে মানুষ মারতো। চুর-ডাকাতি করতো।
স্বয়ং শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই স্বাধীনতার বহু পূর্বেই খুনের রাজনীতি হয়ে আসছে। একবারে সংসদের স্পিকারকেই মুজিবের অনুগত দাসরা মিলে সংসদেই হত্যা করে ফেলেছে। এছাড়া একটু আগেই তো বলেছি যে, বাংলাদেশ হবার পরপরই তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হীন উদ্দেশ্যে ক্রসফায়ারের মতো নোংরা ও মানবতাবিরোধী জঘন্য রাজনীতি শুরু করেছিলেন।
আবার আরেকটা বিষয় হলো, বাংলাদেশে তো তিনি ভোট ডাকাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন, কিন্তু অবিভক্ত পাকিস্তান আমলেও তিনি ভোট চুরি করেছেন। সহজ কথায় বাংলার প্রথম ভোট চোর নেতা হলেন শেখ মুজিবুর রহমানই।
এই হলো আপনাদের শখের শেখ মুজিবুর রহমান। সুতরাং মনে রাখবেন, যতোদিন শেখ মুজিবুর রহমান বন্দনা থাকবে, ততোদিন আওয়ামী স্বৈরাচার থাকবে। থাকবে আওয়ামী গুণ্ডা ও মাফিয়াতন্ত্র। থাকবে আওয়ামী গুম-খুনের রাজনীতি। মুজিব বন্দনা টিকে থাকলে এবং মুজিব বন্দনাকে টিকিয়ে রাখলে আওয়ামী লীগ এখন হেরে গেলেও পুনরায় ফিরে আসবে। বারবার ফিরে ফিরে আসবে।
সেজন্য মূলেই কুঠারাঘাত করতে হবে! শেখের বন্দনা চূড়ান্তভাবে বন্ধ করতে হবে। মুজিব বন্দনা চূড়ান্তভাবে নির্মূল না হলে আওয়ামী স্বৈরাচার কস্মিনকালেও নির্মূল হবে না, হবে না, হবে না!
[ধারাবাহিকভাবে চলবে এই সিরিজ। সামনের পর্বগুলোতে শেখ মুজিবুর রহমানের কথিত বঙ্গবন্ধু হওয়া এবং কালচারাল এলিট, ইন্ডিয়া ও লেজকাটা বামপন্থীদের ব্যাপারে আলোচনা করবো ইন শা আল্লাহ!]
লেখক: রেদওয়ান রাওয়াহা
০২.০৮.২৪